Magh Falgun Choitro Mase Bhati Elakay | মাঘ ফাল্গুন চৈত্র মাসে ভাটি এলাকায়
Bangla Folk Songs , Bangla Folk Song Lyrics, Bangla Songs
মাঘ ফাল্গুন চৈত্র মাসে ভাটি এলাকায়
আনন্দ মেলা হয় বিভিন্ন জায়গায়
অধিকাংশ মেলা বসে দেবস্থানের কাছে
এমনি এক দেবস্থান ধলগ্রামে আছে
পরমেশ্বরী নামে রহিয়াছে শীলা
এই উপলক্ষে হয় ধলগ্রামে এই মেলা।
জানি না কবে থেকে আরম্ভ হয়েছে
পূর্বে ছিল মেলা এখনো রয়েছে
পঞ্চাশ বছর পূর্বের কথা আজও মনে পড়ে
বসিত এই তীর্থমেলা কালনী নদীর তীরে।
সুরমা হতে কালনী নদী আরম্ভ হয়েছে
দিরাই শাল্লা পার হয়ে আজমিরী গিয়েছে।
ভেড়ামোহনা নাম ধরিয়া তখন
নদী তার গতিপথে করেছে গমন।
নদীপথে যোগাযোগ ছিল পরিষ্কার
কালনী নদী দিয়া তখন চলতো ইস্টিমার।
ঢাকা হতে সার্কাস দল অসিত নৌকায়
যোগদান করিত এই আনন্দ মেলায়।
হাতি ঘোড়া বাঘ ভাল্লুক সঙ্গে নিয়া আইত
মেলাতে ঘর বাঁধিয়া খেলা দেখাইত
দেবস্থানে হইত দেবীর পূজা ও ভজন
হিন্দু সবাই করত তাদের নাম সংকীর্তন।
হরেক রকম মালামাল আসিত নৌকায়
সুলভে মিলিত তখন যে যাহা চায়।
মেলা বসিত কালনী নদীর দক্ষিণ কূলে
উত্তর পারের লোকজন মেলায় যাইত চলে।
সেই সময় ঘাটের মাঝি থাকিত বন্ধান
জ্যৈষ্ঠ মাসে দেশের লোকে দিত তারে ধান।
পাঁচ সের দশ সের আর কেউ দিত এক মণ
এতেই চলিত মাঝির ভরণ-পোষণ।
দায়িত্ব নিয়া মাঝি ঘাটে খেওয়া দিত
মাসে দুইদিন গ্রাম থেকে ‘পরভী’ তুলে নিত।
একজনে এক বেলা খাইতে যাতে পারে
এই পরিমাণ চাল মসল্লা দিত ঘরে ঘরে।
পরবী তুলে গ্রাম থেকে যে চাল মসল্লা পাইত
এই দিয়ে ঘাটের মাঝি সুখ শান্তিতে খাইত।
তিনশো মণ দু-তিন খানা নৌকা থাকিত
নিজ দায়িত্বে মাঝি তাহা মৌজুত রাখিত।
খেয়াঘাটে ছিল না যে পয়সার দরকার
মাশুল বিনা মানুষ তখন হইত পারাপার।
মেলা হইত ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার
চারদিক থেকে লোক আসিত হাজার হাজার।
মেলা আসিল বলে পড়ে যেত সাড়া
ঘরে ঘরে তৈয়ার হইত মুড়ি আর চিড়া।
গ্রামবাসী সবাই মেলার প্রস্তুতি নিত
একে অন্যেরে তখন সুদমুক্ত ঋণ দিত।
এই সময় ঘরে ঘরে আসিত নাইওরী,
মেলা যোগে অতিথ এসে ভরে যেত বাড়ি।
আসতেন তখন বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন
মেলা যোগে হইত এক আনন্দ মিলন।
গ্রামের সবাই হইতেন আনন্দে বিভোর
স্বজনে-স্বজনে হইত মিলন মধুর।
চিড়া-মুড়ি দধি-দুগ্ধে নাস্তা সবাই দিত
তারপরে কী খাওয়াবে সেই ব্যবস্থা নিত।
দই দুগ্ধের অভাব ছিল না গ্রামবাসীদের
দুগ্ধ তখন বিকাইত দুইআনা সের।
শাক-শবজি ও মাছের তখন অভাব ছিল না
সাধ্যমত সবাই সেদিন খাইত ভালো খানা।
পারাপারে মাঝি কোনো পয়সা নিত না
ব্যবসায়ীগণ কোনো খাজনা দিত না।
সম্পূর্ণ নিস্কর ছিল দ্রব্য যাবতীয়
মেলা ছিল দেশবাসী সকলের প্রিয়।
সুখে দুঃখে ছিল মানুষ একে অন্যের সাথি
হিন্দু এবং মুসলমানে ছিল সম্প্রীতি।
দিরাই-শাল্লা-আজমিরীগঞ্জে যত কর্মকার
পূর্ব থেকে মালামাল করিত তৈয়ার।
ছেনি-কাঁচি-দা-কুড়াল-খন্তি-কুদাল
জালের কাঠি কৃষকের লাঙ্গলের ফাল।
কেহ আনত ডেগ-কলস-ঘটি-বাটি থালা
যার যা দরকার খরিদ করে ভরে নিত ছালা।
বেলাবরের বেল আসিত হবিগঞ্জের আঁখ
ধলমেলার বেল-কুশিয়ার ছিল এক ডাক।
এখানে আঁখ বলে না কুশিয়ার বলে
খরিদ করে নিত মানুষ বাড়ি যাবার কালে।
কেহ বলত, আমি মেলায় সার্কাস দেখতে যাই
কেহ বলত, আমি মেলার মিষ্টি ভালো পাই।
কেহ বলত, মিষ্টি তো হাট বাজারে মিলে
আমি আনি বেল-কুশিয়ার ধল মেলাতে গেলে।
এলাকার মানুষের যাহা প্রয়োজন
সব রকম মালামাল আসিত তখন।
কাঁচা বাঁশের ছাতা-ছাত্তি-চাটি-পাটি আর
কোচা-অছু-পলো নিয়ে বসিত বাজার।
ছাতা-ছাত্তি-চাটি-পাটি কিনে নিত পলো
গ্রামের মানুষ পলো দিয়ে মাছ ধরিত বিলো।
এইগুলো নেওয়ার জন্য এখন কেউ আসে না
কোচা অছু পোলোর আর বাজার বসে না।
কোনোখানে জনগণের নাই অধিকার
হেমন্ত কি বর্ষাকালে মাছ ধরে খাওয়ার।
সব মালেরই পৃথক পৃথক বাজার বসিত
খরিদ্দার ইচ্ছা মতো খরিদ করে নিত।
নোয়াগর-জলসুখা-আজমিরীগঞ্জের কাছে
ঘোষ সম্প্রদায় তারা পূর্ব থেকেই আছে।
গ্রাম্যভাষায় ঘোষ বলে লেখে তারা গোপ
দধি দগ্ধের কারবার করে এই তাদের রূপ।
সেই সময় ছিল তারা দুইশত ঘর
ছয়কুড়ি জলসুখা গ্রামে, বাকি নোয়াগর।
দধি দুগ্ধ নিয়ে সবাই নৌকায় আসিত
কালনীর পারে দোকান করে তারা বসিত।
খাঁটি দুগ্ধের ছানা-মিষ্টি মেলাতে মিলিত
কোনো জিনিষে তখন ভেজাল ছিল না তো।
ছানার মিষ্টি চিড়া-মুড়ি দধি-দুগ্ধ পাইত
নদীর পারে বসে মানুষ ইচ্ছামত খাইত।
মিষ্টির ঘরে দোকানদারে বসার স্থান দিত
খরিদ করে খাইত আর বাড়ির জন্য নিত।
এক পয়সার মাটিপাতিল খরিদ করিয়া
মিষ্টি নিত বাড়ির জন্য পাতিল ভরিয়া।
দ্বিতীয় বুধবারে হইত মেয়েলোকের মেলা
স্বচক্ষে দেখেছি যাহা আজও যায় না ভোলা।
এলাকার হিন্দু সবাই ধর্মীয় ভাবুক
আসত এ দিন হাজার হাজার হিন্দু মেয়েলোক।
এর মধ্যে কারো কোনো মানস থাকিলে
ভক্তিভাবে স্নান করিত কালনীর কালো জলে।
ঢাকা-সিলেট হতে মাল খরিদ করে লইত
মেলাযযাগে শতাধিক গানেরই নৌকা আইত।
তৈল সাবান চুলের কাটা চিরুনী আর আয়না
আনতো সময়োপযোগী ছোটদের খেলনা।
কর্ণফুল, গলার মালা, হাতের বালা, চুড়ি
এইসব নিয়ে দোকান করে বসত সারি সারি।
সাবান সোডা রেশমি তাগা আনতো মনমিঠাই
এক পয়সায় বারো মজা এইসব এখন নাই।
পূর্ব হতে আজ পর্যন্ত আমার যাহা জানা
মেলায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে না।
ব্রিটিশ আমলে মেলার পূর্ণরূপ ছিল
দেশ বিভক্ত হয়ে যখন পাকিস্তান এল।
ধনী-মানী-জ্ঞানী-গুণী হিন্দু ছিল যারা
ধীরে ধীরে গ্রাম ছেড়ে চলে গেল তারা।
শহর বন্দরে কেহ দেশের বাহিরে
চলে গেল যে যাহা ভালো মনে করে।
বিভিন্ন অসুবিধায় পড়লেন জনগণ
বাড়িয়া চলিল দেশে অভাব অনটন।
পূর্বে যে জায়গাতে ছিল মেলার স্থান
এই জায়গাতে এখন ফলায় ইরি ধান।
দিনে দিনে অবনতি কী বলিব কারে
কৃষকের ফসলহানি দ্রব্য মূল্য বাড়ে।
দুর্বলকে শোষণ করে নিতেছে সবলে
অধিকাংশ মানুষ একন দুর্ভিক্ষের কবলে।
গ্রামে দেখেছি তখন ধনী ছিল যারা
গরিবকে ঋণ দিত সুদ নিত না তারা।
সেই সময় সুদখোরের সংখ্যা ছিল কম
কালনীর কুমির ছিল গরিবের যম।
ধার্মিক যারা পাপের ভয়ে সুদ-ঘুষ খাইত না
ধরত যারে কাল কুমিরে ছাড়িয়া দিত না।
সুদ-ঘুষে মানুষ এখন হলো অগ্রসর
ধনীরা নেয় না এতিম মিসকিনের খবর।
সততা নাই সত্যানুষের অভাব পড়েছে
দেশ জুড়ে অসৎ লোকের মাত্রা বেড়েছে।
লোভে যারা খাদ্যে ভেজাল মিশাইতে পারে
তাদের কাছে ধর্ম আছে বলব কেমন করে।
সামাজিক অশান্তি লোভ-লালসার ফলে
গ্রামীণ সমাজ এখন ভেঙ্গে গেছে মূলে।
মানুষে মানুষে যে সুসম্পর্ক ছিল
ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হলো।
স্বার্থপরদল যখন পাইল দখলদারী
তখন আসিল দেশে স্বার্থের মারামারি।
ধর্মাধর্ম কিছুই নয় মূলে হলো টাকা
বিপদে পড়ে কাঁদে যারা ভুখা-ফাঁকা।
এখন অবস্থা দেখে এইটুকু যায় বলা
কারো জন্যে মেলা আর কারো জন্যে জ্বালা।
নাম শুনিলে ভয় পায় গরিব কাঙাল,
তারা বলে মেলা নয় আসিতেছে কাল।
বৎসর শেষে ভাটি দেশে ফাল্গুন চৈত্র মাসে
গরিবের মরণের সময় তখন আসে।
গরিব কৃষক ক্ষেতমজুর খাইতে পায় না ভাত
দুর্বলের দুর্বলতা বাঁচে কি না জাত।
এই দুঃসময়ে এখন মেলা আসিলে
গরিবগণ পড়তে হয় সুদের কবলে।
সুদি-লগ্নির কারবার এখন চলেছে দেশ জুড়ে
কাড়াকাড়ি-মারামারি যে যেভাবে পারে।
একশো টাকায় বিশ টাকা সুদ দিতে হয় মাসে
এইভাবে লেনা-দেনা হইতেছে দেশে।
অধিকাংশ মানুষ যখন অসুবিধায় পড়ে
এই সময় সুদের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে।
চৈত্র মাসে সুদি-লগ্নির অন্য এক বিধান
একশো টাকায় দিতে হয় তিনশো টাকার ধান।
ভাতিজায় বলে চাচা মেলায় কী করণ
চাচা বলে ওরে বাবা আমার তো মরণ।
মেলা আসিল এখন হাতে পয়সা নাই
একমাত্র ভরসা যদি সুদি টাকা পাই।
এছাড়া আর কী আছে কী করিব বলো
সুদের কবলে পড়ে সকলই তো গেল।
সাধারণ মানুষে এইসব আলোচনা করে
শান্তি এখন আছে বলো কয়জনের অন্তরে।
আগের মতো দধি দুগ্ধ মানুষে আর পায় না
ঘরে ঘরে চিড়া-মুড়ি তৈয়ার এখন হয় না।
তিনশো মণা নৌকা নিয়া মাঝি আর আসে না
খাজনা বিনা এখন কোনো দোকান বসে না।
মানবতার পক্ষে বলি বলুক না কেউ দোষী
এখন আনন্দ নয় জুয়া খেলা হয় বেশি।
স্বার্থপর কর্তা-কর্মী এক হয়ে গেলে
বৈধ-অবৈধ নাই সব কিছুই চলে।
দুই দিন দুই রাত জুয়া খেলা হয়
কড়া পাহারা থাকে নাই কোনো ভয়।
আনন্দ ঠিকই আছে ভাগ্য যাদের ভালো
ভাটিয়াল হাওয়ায় রঙিন বাদাম নৌকায় যারা দিল ॥
……………………..
শাহ আব্দুল করিম
Lyrical Diary: Magh Falgun Choitro Mase Bhati Elakay | মাঘ ফাল্গুন চৈত্র মাসে ভাটি এলাকায়
Magh Falgun Choitro Mase Bhati Elakay | মাঘ ফাল্গুন চৈত্র মাসে ভাটি এলাকায় – Bangla Folk Songs, Bangla Folk Song Lyrics, Bangla Songs.
Folk song lyrics have been an integral part of Bangladeshi culture for centuries. These songs are known for their simplicity, melodic tunes, and meaningful lyrics that reflect the lives and struggles of people from different walks of life. Bangla folk song lyrics have a unique charm that transcends language barriers and connects with people on an emotional level.
We would appreciate it if you could let us know as soon as possible so we can correct the mistake and update the song as soon as possible. We would love to get them corrected for our readers.
Don’t forget to comment down the favorite Part/line of this song. Do share these lyrics with your close ones.
Lyrical Diary-
Enjoy reading lyrics and trying to do them more than just lyrics, trying to have some more me. I enjoy doing this because it allows me to express myself in a unique way that not everyone can do. It also gives me a chance to learn new things, which I appreciate.
Lyrics are a way to communicate emotions, and they can be used to entertain or provoke an emotional response in the listener. Therefore, lyricists need to use complex academic jargon to evoke a strong emotional response. They can create a connection with their listener and hopefully evoke a feeling of enjoyment or pleasure.